১০ Jul, ২০২৩
ছবি: বগুড়ার দই
বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে ভোজনবিলাসীদের পরিতৃপ্ত খাবারের পর অপূর্ণ থেকে যায় যদি স্বাদে ও গুনে ভরা শেরপুরের দই না থাকে। সামাজিক প্রীতি ভোজের শেষ পাতে দই না হলে যেন চলেই না।
বগুড়ার দই নামের ভিতরেই যেন লুকিয়ে আছে শত বছরের ঐতিহ্য। বগুড়াকে অনেকেই বলেন দইয়ের রাজধানি। মূলত বগুড়ার শেরপুর উপজেলা এই ঐতিহ্যবাহী দইয়ের জন্যই বিক্ষ্যাত। সম্প্রতি world intellectual property organization বগুড়ার দইকে ভৌগোলিক নির্দেশক বা Geographical indication সংক্ষেপে GI খাদ্য তালিকায় সংযুক্ত করেছে।
জানা যায়, ২৫০ বছর আগে শেরপুরের ঘোষ পরিবারের ঘেটু ঘোষ প্রথম টক দই বানানো শুরু করেন। এর ঐতিহ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে স্থান দখল করেছে বিশ্বে জুড়ে। ষাটের দশকের শুরুতেই বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকেও গিয়েছে বগুড়ার দই। পাকিস্তানের তদানিন্তন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠিয়েছিলেন এই বগুড়ার দই। আর এই বিশ্বখ্যাতি অর্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে বগুড়ার শেরপুরের দইয়ের কারিগরেরা।
মূলত দু’ধরনের দই তৈরী হয় বগুড়ার শেরপুরে। টক দই আর মিষ্টি দই। কোন প্রকার চিনি ছারা যে দই তাকে বলা হয় টক দই। প্রথম দিকে উপজেলার বিভিন্ন দই কারখানাতে টক দই তৈরী হলেও স্বাদের বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার কারনে টক দইয়ের পাশাপাশি মিষ্টি দই এখন পুরো বাজার নিয়ন্ত্রন করে।
বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী শেরপুরে প্রায় দু’শতাধিক দইয়ের কারখানা রয়েছে। এসব দই কারখানায় কাজ করেন প্রায় আড়াই শতাধিক কর্মচারী। দই বিক্রয় কেন্দ্রের কর্মচারীসহ প্রায় পাঁচ হাজার জনশক্তি প্রত্যক্ষ ভাবে দই তৈরী ও বিক্রির কাজে সম্পৃক্ত।
পুরো শেরপুর উপজেলায় প্রতি দিন প্রায় সাড়ে তিন থেকে চারশ মণ দই উৎপাদনের সাথে খিরসা, মিষ্টি সহ মাসে প্রায় ২০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক লেনদেন হয়। সরাসরি দই বিক্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি উপজেলার অনেক তরুণ উদ্দ্যোক্তা অনলাইনেও দই বিক্রি করে থাকেন।
তবে এটা এখন শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘোষ পরিবারেই সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে মুসলিম সম্প্রদায়ের দই প্রস্তুতকারকদের সংখ্যা ও অনেক।
শেরপুরের দই প্রস্তুতকারক সাব্বির আহমেদ বলেন, বগুড়া শেরপুরের দই সারা দেশে বিখ্যাত। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য। দুধের দাম উঠানামা করা এবং অন্যন্য সামগ্রীর দাম দিনদিন বৃদ্ধি পাওয় বর্তমানে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে আসল স্বাদের দই খেতে হলে শেরপুরের কোনো বিকল্প নেই।