০৬ নভেম্বর, ২০২৪
ছবি: ছাতক পৌর সভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী
ছাতক পৌর সভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ।
সুনামগঞ্জের ছাতক পৌর সভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১৯৯৮ সালে পৌরসভা প্রতিষ্টার পর থেকে
তিন মেয়াদে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী গ্রুপিং রাজনীতির মাধ্যমে অবৈধ টাকা আর পেশী শক্তির প্রভাব খাটিয়ে প্রয়াত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের পশ্রয়ে এলাকায় গড়ে তুলেন নিজস্ব বলয়।
নিয়ন্ত্রণে নেন লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কোম্পানি, সিলেট পাল্প এন্ড পেপার মিল, ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিঃ,আকিজ প্লাস্টিক লিঃ,নৌপথে চাঁদা বাজি সহ সকল অরাজকতা তার ভাই - ভাতিজা ও বলয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা, ব্যবসায়ী সমিতি ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পদ গুলো ছিল তার পরিবার এবং স্বমর্থক দের দখলে ।
কোম্পানি গুলোর স্থায়ী অস্থায়ী জনবল নিয়োগ ও টেন্ডার বানিজ্য ছিল আবুল কালাম চৌধুরী ও তার ভাই দের নিয়ন্ত্রণে। ফলে পকৃত ঠিকাদাররা ছিল বঞ্চিত। আবুল কালাম চৌধুরী পৌর মেয়র থাকাকালেও লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কোম্পানিতে কালাম এন্ড কোং নামে শ্রমিক সরবরাহের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করতেন।
তিনি পরিবেশের ক্ষতি করবেননা বলে পৌর মেয়র হিসাবে শপথ নিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কোম্পানিতে মাটি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয় করেছেন। যা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের কোন দপ্তরই কখনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি পৌর সভার মেয়র থাকাকালে নির্মানকাজ পরিদর্শনে গিয়ে পাথর বালি হাতে নিয়ে কাজের মান যাচাই বাছাই করতেন। সামান্য অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্টদের বকা ঝকা করতেন। তার অনুসারীরা এ ধরনের দুর্নীতি বিরোধী বক্তব্য ও তৎপরতা জনসাধারণের মধ্যে প্রচারনা করতেন।
তবে বাস্তবে একেবারেই উল্টো চরিত্রের ছিলেন আবুল কালাম চৌধুরী।অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন অঢেল অর্থ সম্পদ।ছাতক পৌর সভা থেকে শুরু করে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কোম্পানি, ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিঃ,নিটল নিলয় কাটিজ পেপার মিল, আকিজ প্লাস্টিক লিঃ,নিজের ভাই ভাতিজা দের দিয়ে সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
ঠিকাদারি কাজের ভাগ বন্টন, বেআইনি ভাবে নিজেই ঠিকাদারি কাজ করা।পছন্দের লোকদের নিয়োগ দেওয়া, পৌর সভার মেয়র হয়েও লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কোম্পানিতে জনবল শ্রমিক সরবরাহের ঠিকাদারি কাজ করা, কমিশন বানিজ্য স্বজন প্রীতি,নৌ পথে চাঁদা বাজি সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।
রহমত ভাগ আবাসিক এলাকায় সুরমা নদীর পাড়ে ৮৬ শতক জমি কিনেছেন গরু-ছাগলের হাটের জন্য।
এ হাটের জমি কিন্তুে ও বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেছেন আবুল কালাম চৌধুরী। এ জমিতে মাটি ভরাটের কাজেও কয়েক লক্ষ টাকা নয়ছয় করেছেন।জানা যায় স্থানীয় মাটি বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৭ টাকা ফুটে মাটি কিনে ১২ টাকা ফুট দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন পৌর সভার রাজস্ব খাতের তহবিল থেকে।
ছাতক পৌর সভার মূল ভবনে কনফারেন্স হল না-থাকলেও ভবনের বেত্যায় ঘটিয়ে নকশা পরিবর্তন করে টাকা আত্মসাত করতে কোটি টাকা ব্যায়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ছাড়াই জুর পূর্বক ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের মাধ্যমে কনফারেন্স হল নির্মান করেন আবুল কালাম চৌধুরী।
এসব নানা অনিয়ম দুর্নীতির নির্মান কাজের ফাইলে সাক্ষর না করায় তৎকালীন উপ সহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ রায়ের কাছ থেকে জুর পূর্বক সাক্ষর আদায় করে তার বেতন ভাতা আটকে রেখে তাকে অন্যত্র বদলী করেদেন আবুল কালাম চৌধুরী।
দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আয় করতে কারো পরামর্শ ছাড়াই অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহন করে পৌর সভার মূল ভবনের পাশে ঢাকার মিম ডেভেলপমেন্ট ইন্জিনিয়ারিং এর নামে ১৩ কোটি ২৯ লাখ ৮৭ হাজার ২০৭ টাকা ব্যায়ে নতুন একটি অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ করেন আবুল কালাম চৌধুরী।
এ ভবনে অতিরিক্ত ব্যায় দেখিয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকায় উন্নিত করে এডিপি খাতের টাকা খরচ দেখালেও এর কোন সঠিক নথিপত্র নেই পৌর সভায়।
জানা যায় ভবনের নির্মান কাজের শুরুতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিম ডেভেলপমেন্ট ইন্জিনিয়ারিং কাজ করলেও কিছু দিন পর কাজে অনিয়মের অজুহাত দেখিয়ে তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে আবুল কালাম চৌধুরী নিজেই ঠিকাদারি কাজের তদারকি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেছেন এ প্রকল্প থেকে। এখনো ভবনটির নির্মান কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে।
শহরতলীর মাধবপুর এলাকায় রি- সাইক্লিং এর মাধ্যমে ময়লা আবর্জনা ডাম্পিং ইয়ার্ডের জন্য জমি ক্রয় ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মানেও প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। পৌর কার্যালয়ের আশপাশে ও মাধব পুরস্থ বঙ্গ ববন্ধু সড়কের পাশে প্রায় শত কোটি টাকার জমি কিনেছেন আবুল কালাম চৌধুরী।
নোয়ারাই ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে প্রায় শতাধিক হেক্টর জমি কিনেছেন আবুল কালাম চৌধুরী। ছাতক - গোবিন্দগঞ্জ সড়কের মাধবপুরস্থ এ কে ফিলিং এন্ড সিএনজি স্টেশনের মালিক আবুল কালাম চৌধুরী।এছাড়া প্রায় সাত থেকে আট কোটি টাকার বালির স্তুুপ রয়েছে সুরমা নদীর পাড়ে আবুল কালাম চৌধুরীর।
প্রথম শ্রেনির এ পৌর সভায় তিন মেয়াদে প্রায় ২০ বছর ধরে মেয়রের দ্বায়িত্ব পালন করলেও চোখে পড়ার মত কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি।পৌর শহরের রাস্তা ঘাটে ময়লা আবর্জনার স্তূপ, নেই কোন পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন,বিনোদন ও খেলার মাঠ সহ কোন ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা নেই ছাতক পৌরসভায়।
পৌর সভার নাগরিক আব্দুল মতিন জানান দীর্ঘদিন ধরে পৌর বাসী উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছে। চাঁদা বাজি, টেন্ডার বানিজ্য আর অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে মেয়রের পরিবারের লোকজন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে।
সরকারি দপ্তরের তদন্তের মাধ্যমে এসব বের করা উচিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ছাতক পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ গোলাম মুস্তাফা মুন্না জানান পৌর সভায় সব কিছুতে প্রচুর গরমিল রয়েছে। ভাল ভাবে অডিট করলে সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে।
Good news
Good