৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
ধর্ম ও জীবন

একজন শাসকের দায়িত্ব-কর্তব্য ও ইসলামের পরিভাষা

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আব্দুল্লাহ হিল কাইয়ূম,
বার্তা সম্পাদক

ছবি:

সুশৃংখল সমাজ গড়তে ও ন্যায়প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজ বা রাষ্ট্রে ‘শাসক’ থাকা আবশ্যক। কারণ, একেক মানুষের চিন্তা-ভাবনা, স্বভাব-চরিত্র একেক রকম। ফলে তাদের মধ্যে থেকেই নিয়ন্ত্রক বা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাজে সংঘর্ষ লাগা খুব স্বাভাবিক। এ জন্য প্রয়োজন শাসক ও নীতিনির্ধারক। ইসলামে ন্যায়পরায়ণ শাসকের দায়িত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে। নিচে এ সংক্রান্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো। 

শাসক জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলনিরপেক্ষভাবে অধীনস্থের অধিকার আদায়ে কাজ করা এবং জনগণের জান-মালের হেফাজত করা শাসকের মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর (কেয়ামত দিবসে) তোমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সুতরাং জনগণের শাসকও একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর পুরুষ তার পরিবারের একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘর-সংসার ও সন্তানের দায়িত্বশীল, তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গোলাম তার মনিবের মালসম্পদের ওপর একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল। আর তোমাদের প্রত্যেককেই (কেয়ামত দিবসে) তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (বুখারি : ২৫৫৪) 

জনগণের অধিকার আদায়মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সম্পদ উপার্জন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে অনৈতিকতা শুধু সমাজেই অস্থিরতা সৃষ্টি করে না, ইসলামেও তা হারাম ও গুনাহের কাজ। অবৈধ আয় রোধ করা, এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং অন্যায়ভাবে আত্মসাৎকৃত মাল মূল মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। এভাবে সুদ, ঘুষ, মুনাফাখোরী, মজুতদারি, চোরাচালান, কালোবাজারি, পরদ্রব্য হরণ, সব ধরনের জুয়া, হারাম সামগ্রীর উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রচলিত সব ধরনের অসাধুতা সমূলে নির্মূল করা সম্ভব। রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে জাকাত আদায়, বিলি-বন্টন ও ব্যবস্থাপনা এবং উত্তরাধিকার বা মীরাসী আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন, ইসলামী শ্রমনীতির রূপদান প্রভৃতি অর্থনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণ সম্ভব। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে এমন কতগুলো বিষয় রয়েছে যা ব্যক্তির হাতে ছেড়ে দেওয়া উত্তম, কিন্তু তার লাগাম রাষ্ট্রের হাতে থাকাই বাঞ্ছনীয়। যেমন উৎপাদন, বন্টন ও বিনিয়োগ। এগুলোর যথাযথ তত্ত্বাবধান না হলে সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে, মুষ্টিমেয় লোকেই সকল সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ফেলবে। ফলে সাধারণ মানুষের দুর্গতির অন্ত থাকবে না। আর এ উদ্দেশ্যেই মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) মক্কা বিজয়ের পর মক্কার বাজারে তদারকি করার জন্য হজরত সাঈদ ইবনে সাঈদ ইবনুল আসকে (রা.) নিযুক্ত করেছেন। (আল-ইসতেআব ১/১৮৭)। শুধু তাই নয়, রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বয়ং বাজারে গিয়ে খাদ্যে ধোঁকাবাজি কিংবা ভেজাল হচ্ছে কি না সে খবরদারি করতেন। একবার রাসুল (সা.) খাদ্য শস্যের একটি স্তূপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি স্তূপের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিলেন, ফলে হাতের আঙুলগুলো ভিজে গেল। তখন স্তূপের মালিককে ডেকে বললেন, এ কি ব্যাপার? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে। রাসুল (সা.) বললেন, ‘সেগুলো তুমি স্তূপের ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে লোকেরা দেখে নিতে পারত। জেনে রাখ, যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি করে, আমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।’ (মুসলিম : ১০২) 

ন্যায়পরায়ণ শাসকের পুরস্কার:
যারা ন্যায় ও সততার সঙ্গে ক্ষমতা ও পদের ব্যবহার করেন, আখেরাতে তাদের মহা পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ন্যায়-নীতিবান বিচারক কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তার ডান পাশে দ্যুতিময় মিম্বারের ওপর অবস্থান করবে। অবশ্য আল্লাহ তায়ালার উভয় পাশই ডান। তারা হলো সেসব বিচারক বা শাসক, যারা নিজেদের বিচার-বিধানে, নিজেদের পরিবার-পরিজনে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে।’ (মুসলিম : ১৮২৭ )। অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন লোকদের মাঝে ন্যায়নিষ্ঠ শাসকই আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে প্রিয় ও নিকটে উপবেশনকারী হবে।’ (তিরমিজি : ১৩২৯) 

স্বৈরাচার শাসকের শাস্তিশাসন-ক্ষমতা গ্রহণের পর যারা স্বৈরাচারিতা করবে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, তাদের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। ইহকালেও নেমে আসতে পারে যেকোনো বিপদাপদ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো বান্দাকে যদি আল্লাহ‌ জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন, আর সে যদি কল্যাণ কামনার সঙ্গে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’ (বুখারি : ৭১৫০)। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি মুসলিম জনসাধারণের দায়িত্ব লাভ করল আর তার মৃত্যু হলো এই অবস্থায় যে, সে ছিল খেয়ানতকারী, তাহলে আল্লাহ‌ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (বুখারি : ৭১৫১)। অধীনস্থের দুঃখ-কষ্টে সহানুভূতি প্রকাশ করা ও তাদের প্রতি ইনসাফ করা আবশ্যক। কারণ শাসক যখন জুলুম অত্যাচার আরম্ভ করে তখন তার ওপর থেকে আল্লাহর সাহায্যের হাত উঠে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে পর্যন্ত বিচারক কোনো প্রকার জুলুম না করে সে পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা তার সহায়ক হন। সে যে মুহূর্তে কোনো প্রকার জুলুম করে ফেলে তখন তিনি তাকে পরিত্যাগ করেন এবং শয়তান তাকে জড়িয়ে ধরে।’ (তিরমিজি : ১৩৩০) 

মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

Related Article
comment
Poran Hasan
25-Mar-23 | 10:03

ধন্যবাদ 🌸💚

মোঃ মনির হোসেন বকাউল
28-Sep-23 | 10:09

Good news