২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
সারাদেশ

কক্সবাজার জেলায় ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি শরীর ব্যাথা

১০ অগাস্ট, ২০২৫

কাজল কান্তি দে,
কক্সবাজার জেলা (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

ছবি: কক্সবাজার সদর হাসপাতাল

কক্সবাজার জেলা জুড়ে চলছে জ্বর ও সর্দি-শরীর ব্যথার প্রকোপ। ঘরে ঘরে আক্রান্ত রোগী। হাসপাতালে বেড ভাগাভাগি করে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। বাড়িতে একজন আক্রান্ত হলেই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে পুরো পরিবার। জ্বরের তীব্রতা এতই বেশি যে পুরো শরীরে তীব্র ব্যথার সঙ্গে অনেকের শ্বাসকষ্টও হচ্ছে।

সিভিল সার্জন বলছেন, এই জ্বরের চিকিৎসা করলে সেরে যাবে। আতঙ্কিত না হয়ে বাসায় বসেও চিকিৎসা নিলে সপ্তাহের মধ্যে সেরে যাবে এ জ্বর। তবে গেল ২ সপ্তাহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এত সংখ্যক রোগীর সমাগম হয়েছে যে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সবুক্তগীন মাহমুদ সোহেল জানান, ২৫০ শয্যার হাসপাতালে বর্তমানে (৯ আগস্ট) ভর্তি রোগী ৬৭৮ জন। গতকাল শনিবার আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১,১৫৭ জন রোগী। অর্থাৎ গতকাল ১ দিনে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ১,৮০০ এর অধিক রোগীকে। এর দুই-তৃতীয়াংশ এসেছেন সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থা ভয়াবহ। আমাদের চিকিৎসকগণ নির্ঘুম সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের ভয় নেই। আউটডোর ও ইনডোর মিলিয়ে গত ১ সপ্তাহে প্রায় ৬ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার রোগী জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত। বেশিরভাগই শরীর ব্যথা নিয়ে এসেছেন। শিশু ওয়ার্ড, মহিলা ওয়ার্ড, জরুরি বিভাগ, প্রতিটি ইউনিটের হাঁটার জায়গায় রোগীদের জন্য আলাদা বেড বসিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এক বেডে ৩ জন রোগী শেয়ার করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ডা. সবুক্তগীন।

শহরের বেসরকারি ও সদর হাসপাতালে ঘুরে যে চিত্র পাওয়া গেছে তা ভয়াবহ। আক্রান্ত ছোট-বড় সবাই। সিজনাল এই জ্বরে কাবু হয়ে পড়ছেন আক্রান্তরা। জ্বরের সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আক্রান্তদের ভুগতে হচ্ছে এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত। জ্বর ভালো হওয়ার পরও শারীরিক ক্লান্তি দীর্ঘদিন থাকছে, যার প্রভাব পড়ছে দৈনন্দিন কাজে। অনেকেই ঠিকমতো খেতে পারছেন না। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক, শ্বাসকষ্টজনিত রোগী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম—তাদের বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সদরের খরুলিয়া থেকে সদর হাসপাতালে আসা কবির আহমদ বলেন, “৫/৬ দিন প্রচণ্ড জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়েছি, কিন্তু ভালো না হওয়ায় গতরাত ৯-১০টার দিকে অবস্থা খারাপ হলে সদর হাসপাতালে চলে আসি। জ্বরের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে সহ্য করতে পারিনি। সঙ্গে পুরো শরীর প্রচণ্ড ব্যথা, যার কারণে ভয়ও পেয়েছিলাম। এখন একটু ভালো লাগছে।” পরিবারের আরও ৪ জনকে বাসায় চিকিৎসা দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

সদর হাসপাতাল, ইউনিয়ন হাসপাতাল, আল ফুয়াদ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, ডিজিটাল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে আসা বেশিরভাগ রোগী জ্বর, বমি ও শরীর ব্যথা নিয়ে আসছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। কেউ কেউ করোনায়, কিছু রোগী ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কিংবা টাইফয়েডে আক্রান্ত। রোগীদের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে—দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী জ্বর, গলাব্যথা, হালকা কাশি, মাথা ও পুরো শরীর ব্যথা, দুর্বলতা এবং কিছু ক্ষেত্রে হালকা শ্বাসকষ্ট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু, টাইফয়েড ও মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষ। একজনের জ্বর হলে পরিবারের অন্যরাও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। উপসর্গও প্রায় একই রকম। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ ভাইরাস ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বরে।

আক্রান্ত এসব রোগীর চিকিৎসা বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, “হালকা উপসর্গ দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে ঘরে বিশ্রাম নিতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মাস্ক পরা এবং গরম, তরল খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।” তিনি বলেন, “জ্বর আসলে কোনো রোগ নয়, বরং এটি রোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ। অনেক কারণে জ্বর হতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ঠান্ডা লেগে জ্বর হওয়া বা সর্দি-কাশির কারণে জ্বর। এর বাইরে শরীরের ভেতরে কোনো কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণ হলে, অর্থাৎ ইনফেকশন হলে জ্বর হতে পারে। এছাড়া টিকা নিলে, ফোড়া বা টিউমার হলে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হলে, মাসিকের কারণে, আকস্মিক ভয় পেলে বা মানসিক আঘাত পেলেও জ্বর হতে পারে। প্রতিবছর এই সময়ে এ রোগ বৃদ্ধি পায়।”

তিনি সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।

Related Article
comment
মোঃ মনির হোসেন বকাউল
29-Sep-23 | 10:09

Good news

মোঃ মনির হোসেন বকাউল
10-Dec-23 | 04:12

Good