১৫ Jun ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
পরিবেশ

লাশের সাথেই ঘুমাতে হয় জায়েদা ও বজলুর

২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

সাইফুর রহমান বাদল,
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

ছবি: জায়েদা খাতুন

রাতের আধার ঘনিয়ে এলেই পঞ্চাশোর্ধ জায়েদা খাতুনের চোখের ঘুম হারিয়ে যায়। আশপাশে আর কোন বসতি নেই। ঘরে স্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামী, ঠিক বাইরে পুরাতন আর সদ্য দাফন কৃত লাশের ভয়, শেয়াল-কুকুরের ডাকাডাকির আতংক । আছে বিষাক্ত সাপের ভয়। তবু বিগত ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে এই ভয় আর আতংক নিয়েই হরিনাকুন্ডুর জোড়াদাহের ভেড়াখালী গ্রামের কবরস্হানের একখন্ড জমিতে টিনের ছাপড়াঘর বেঁধে বসবাস করছেন সহায়-সম্বলহীন জায়েদা ও তার অসুস্থ স্বামী। এ যেন মরনের আগেই কবরবাস! অভিযোগ উঠেছে, অসহায় এই পরিবারকে কোন প্রকার পূনর্বাসন ছাড়াই সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছেন। এ অবস্হায় একদিকে কবরস্হানের ভয় অন্যদিকে মাথা গোজার ঠায় হারানোর ভয় নিয়ে এই পরিবারের দিন কাটছে।

জানা যায়, স্হানীয় পটল আলীর জমিতে  ঘর তুলে জায়েদা ও তার স্বামী  বসবাস করতেন। ২০ বছর পূর্বে সেখান থেকে উচ্ছেদ হওয়ার নিজের গচ্ছিত সব টাকা দিয়ে ভেড়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন খড়ের মাঠে নামমাত্র মূল্যে ৪ শতক জমি কিনে খুপরি ঘর তুলে স্বামী বজলুর রহমানকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ১৫ বছর পূর্বে গ্রামবাসী গ্রামের মৃতদেরকে সমাহিত করার জন্য একটি  কবরস্হান তৈরির উদ্যোগ নেন। সে সময় ভেড়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন খড়ের মাঠে থাকা জায়েদার বাড়িসহ আশপাশের জায়গা নিয়ে কবরস্হান ময়দান তৈরি এবং ঐ পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে পূনর্বাসন করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর জমির মালিকরা কবরস্হানের নামে তাদের জমি দান করেন।  


ঐ সময় জায়েদা-বজলু দম্পত্তিকে অন্য জায়গায় মাথা গোঁজার কোন ব্যবস্হা না করেই জমি দান করতে চাপ প্রয়োগ করেন গোরস্হান কমিটি । ঐ ৪ শতক জমি ছাড়া  আর কোন সহায়-সম্পদ না থাকায় তারা জমি দান না করে সেখানেই থেকে যান। এরপর কবরস্হান কমিটি এই পরিবারকে পূর্নবাসনপূর্বক অন্যত্র না সরিয়েই ঐ বাড়িসহ কবরস্হান ময়দানের চারপাশে সীমানা প্রাচীর গড়ে তোলেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক মৃত ব্যক্তিকে ঐ গোরস্থান ময়দানে সমাহিত করা হয়েছে। ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে কবরস্হানে বসবাস করলেও কবরস্হান কমিটি বা কোন জন প্রতিনিধিকে অসহায় পরিবারের পাশে দাড়াতে দেখা যায়নি।

জায়েদা বেগম জানান, এই জমিটুকু বাদে তাদের আর কোন সহায়-সম্পদ নেই। ২ যুগেরও বেশি সময় ধরে একমাত্র ছেলে তার কোন খোঁজ-খবর নেন না। অন্যদিকে তার দিন মজুর স্বামীও স্ট্রোক করে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছেন। বসতঘরের জমি দান করে অন্য জায়গায় জমি কিনে ঘর তোলা দূরে থাক তাদের দু'বেলা দু'মুঠো ভাতের জোগাড়ই হয়না কোন কোনদিন। পরের বাসাবাড়িতে ঝি এর কাজ করে কোন মতে পেটে ভাত জুটে তাদের। গোরস্হান ময়দান কমিটিও  এখন তাদের অন্য জায়গায় মাথা গোঁজার ব্যবস্হা না করে দিয়েই এখান থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে।

জায়েদা বেগমের স্বামী বজলুর রহমান বলেন, স্ট্রোক করে আজ আমি অচল। এই কবরস্হানে ২ বুড়ো-বুড়ি থাকি। বাতাসে আগরবাতি, গোলাপজল আর কাফনের কাপড়ের ঘ্রান উড়ে। রাতে ঘুম হয়না। মাঝে মধ্যেই কুকুর-শিয়াল এসে খুব ডাকাডাকি করে, তখন খুব ভয় লাগে। সরকারের কাছে অনুরোধ, অন্য জায়গায় আমাদের মাথা গোঁজার একটু ব্যবস্থা করে দেন।

স্হানীয় বাসিন্দা মঈন উদ্দীন বলেন, তারা অসহায়, নিঃস্ব। বহুদিন ধরেই কবরস্থানে বসবাস করছে । দ্রুত তাদের উপযুক্ত পূনর্বাসনপূর্বক অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া দরকার। গোরস্হান ময়দান কমিটির সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, পরিবারটি অসহায়। আমাদের কেউ কেউ পরিবারটিকে উপযুক্ত পূনর্বাসন ছাড়াই কবরস্হানের বাড়ি ছাড়তে চাপাচাপি করছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি অন্তত এই অমানবিক কাজের সাথে নেই।

এ বিষয়ে জোড়াদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, কবরস্হানে একটি অসহায় পরিবার থাকে বলে আমি জানতে পেরেছি। তাদের মাথা গোঁজার ব্যবস্হা না করেই কেউ কেউ সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করতে চাইছে। এটা খুবই বেদনাদায়ক। কবরস্হান কমিটির সাথে আলোচনা করা হবে।  এ বিষয়ে সুন্দর সমাধানের জন্য আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উর্ধতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

Related Article