১৫ Jun ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
জাতীয়

মাধবপুরের ইউএনও একেএম ফয়সালের দুর্নীতি ও ক্ষমতার দাপটে কুক্ষিগত ছিল পুরো উপজেলা

১০ অক্টোবর, ২০২৪

ছবি: ইউএনও একে এমন ফয়সাল

অবৈধ বালু ব্যবসার কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য, পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্রের অর্থ আত্মসাৎ ও নকলের সহযোগিতা, ভিন্ন মতাদর্শীদের দমন-পীড়ন ও সাংবাদিকদের হয়রানিসহ অসংখ্য বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে উপজেলায় এক অঘোষিত স্বৈরাচারী রাজত্ব কায়েম করেছিলেন সদ্য বদলী আদেশ পাওয়া হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ইউএনও একেএম ফয়সাল।

এলাকায় লোকমুখে প্রচলিত, ইউএনও সাহেবের ছোঁয়া পেলে বালু ব্যবসার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার মালিক বনে যাওয়া যায়। শুধুমাত্র ৫% কমিশন দিলেই চলবে। বিভিন্ন সূত্র ও পর্যবেক্ষণে উপজেলার বিভিন্ন বালুর মহাল ও মাটি কাটা থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন ফয়সাল। এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকেও ইউএনও একেএম ফয়সালের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

বিগত ৮ ফ্রেব্রুয়ারী মাধবপুরের  বিএনপি নেতা তারেক মির্জা যিনি সাবেক উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য, ইউএনও তার সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে ওই নেতার মালিকানার গাছ স্থানীয় কমলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি নিলামের গাছের সাথে ঢোকিয়ে দেন। ওই নেতা সে সময় প্রতিবাদ জানালেও নিলামে বিক্রি হয়ে যায় তার গাছ।

রাজনৈতিকভাবে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বিএনপি নেতা তারেক মির্জা। পরবর্তীতে বিভিন্ন চাপে ওই নেতা আপোসনামা দিতে বাধ্য হন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম জানান, এখানে আমার কিছু করার ছিল না। আমি ইউএনও স্যারকে বলেছিলাম ওই নেতার গাছগুলো বাদ দেওয়ার জন্য। পরে ওই নেতার কাছ থেকে লিখিত অনাপত্তি রেখে দেই।

বিগত ১৩ মে, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা কমিটির সভাপতি ইউএনও ফয়সালের প্রত্যক্ষ মদদে এক মুক্তিযোদ্ধার সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা গায়েব হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই টাকা একাউন্টে জমা দিলেও কোন গায়েবি কারনে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি ইউএনও। নামমাত্র ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহন চোখে পড়েনি। তদন্ত কমিটির একজন মাধবপুরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.আব্দুস সাত্তার বেগ জানান, তদন্ত প্রতিবেদন আমরা জমা দিয়েছি। অপরাধীরা অ্যাকাউন্টে টাকা ফেরত দিয়েছে।ইউএনও স্যারই এখন বিচার করার মালিক।

বিগত ২০২৩ সালের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র ফি ও শিক্ষকদের  ডিউটির প্রায় ৭ লক্ষ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে । যেহেতু ইউএনও উপজেলার ৫টি পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র কমিটির সভাপতি তাই আত্মসাতের দায়ও তার উপরে বর্তায়। একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে আয় ও ব্যয়ের হিসাব নিতে স্থানীয় এক সাংবাদিক তথ্য অধিকার আইনে জানতে চাইলে তাকে তিনি তাকে যথাযত জবাব না দিয়ে উল্টো হয়রানি করেন। সৈয়দ সৈয়দ উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের কেন্দ্রসচিব সিদ্দিকুর রহমানকে ফুসলিয়ে দায়ের করান মামলাও। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজান মোড়ল এসবের সত্যতা স্বীকার করেন। যার অডিও রেকর্ডও রয়েছে।স্থানীয় দরগা বাড়ি দাখিল মাদ্রাসার দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ও দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব সিদ্দিকুর রহমানের সেল্টারদাতাও ওই ইউএনও। মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে বারবার বাঁচিয়ে রাখতেন ওই অধ্যক্ষকে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসএসসি পরীক্ষার ৫টি কেন্দ্রের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ কমিশন গ্রহণ করতেন। নকল করাকে তিনি অঘোষিতভাবে সমর্থন দিয়ে যেতেন। তিনি বলতেন আমি কেন্দ্র ভিজিটে আসলে সব লুকিয়ে ফেলবে। এসব বিষয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আদালতে মামলাও দায়ের করেছেন।যার তদন্তভার হবিগঞ্জ পিবিআই এর উপর।  


তদন্তে ইউএনওর  সংশিষ্টতা প্রমাণ পাওয়া গেছে।পিবিআইয়ের চার্জশিটে আসামী হচ্ছেন ওই বিতর্কিত ইউএনও ফয়সালসহ আরো অনেক সরকারি কর্মকর্তারা ।এছাড়া হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের থেকেও এসব অনিয়ম-দূর্নীতির উপর তদন্ত চলমান রয়েছে।

মনতলা শাহজালাল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এসএসসির বিভিন্ন কেন্দ্রেই নকল হয়ে থাকে। সম্প্রতি একটি শিক্ষা সপ্তাহে এসব নিয়ে কথা বলায় আমাকে বাহবা না দিয়ে উল্টো অপমান করা হয়।আমি এইসবের গোয়েন্দা তদন্ত দাবি করছি।

উপজেলার বহড়া ইউপির উত্তরশীক গ্রামের হতদরিদ্র আয়শা বেগমের সরকারি বরাদ্দ পাওয়া ৫ শতাংশ বন্দোবস্তের ভূমি ৫ বছর ধরেও দখল না পাওয়ায় ওই ইউএনওর কাছে গেলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এ ছাড়া ওই মহিলার ঘরের উপর এলজিইডির রাস্তার বিপদজ্জনক মরা আকাশমণী গাছ অপসারণ করতে জেলা প্রশাসন থেকে তলব দেওয়া হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ নিয়ে স্থানীয় জনগণ প্রচণ্ড ক্ষুন্ধ হন ইউএনওর উপর।বৃদ্ধার জীবন বাঁচাতে মরা গাছের একটি ডাল অপসারণ করা হলে ওই ইউএনও  স্থানীয় ভূমি অফিসের তহশীলদার মজিবুর রহমানকে নির্দেশ করেন ওই বৃদ্ধা আয়েশা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দেয়ার জন্য।এসব নিয়ে স্থানীয় জনগণ উত্তেজন প্রকাশ করেছেন ওই ইউএনওর উপর।

সর্বশেষ সম্প্রতি কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে একটি সেমিনারে নারী সমাজকে কটাক্ষ করে উদাহরণ দেয়ায় অনেক পত্রিকার হেডলাইন হয়েছিলেন ওই বিতর্কিত কান্ডজ্ঞানহীন ইউএনও। বক্তব্যে তিনি বলেছিলে ফল পাকলে খেতে হয় তেমনি মেয়েদের সময় মত বিয়ে দিতে হয়। ফল পাকার উদাহরণ দিয়ে মেয়েদের ইঙ্গিত করাকে অনেকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখেছেন।

Related Article