২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ছবি: আমের মুকুল।
প্রকৃতিতে ক্যালেন্ডারের পাতায় বাঁজছে শীতের বিদায়ী ঘণ্টা। কিছুদিনের মধ্যে বেলা ফুরাবে, অতিথি পাখিরা ফিরবে নিজ মাতৃভূমিতে। শীতের বিদায়ের সাথে সাথে বসন্তের আগমনে ফাল্গুনের হাওয়া চারিদিক মুখরিত। সময়ের পালাবদলে প্রকৃতির এই খেলায় ঋতুরাজ বসন্তে প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। আগুন ঝরা ফাল্গুনের আহ্বানে শিমুল গাছে ফুটেছে পলাশ। এই মধুমাসে গ্রামের মেটো পথের দূর সীমানা থেকে ভেসে আসছে কোকিলের কুহু কুহু কলতান। নানা ফুলের সঙ্গে সূর ছড়াচ্ছে আম গাছের মুকুল। সোনালী হলুদ রঙের আমের মুকুলের মনকাড়া ঘ্রাণ। মুকুলের সেই সুমিষ্টঘ্রাণ, সুবাস আলোকিত করে তুলছে মানুষের হৃদয়। মৌমাছির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে গুনগুন শব্দে। ছোট পাখিরাও মুকুলে বসেছে মনের আনন্দে, বলছি ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কথা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে আম বাগানে। দৃশ্যটি যে কাউকেই কাছে টানবে। গাছের শাখার পর শাখায় ফুলগুলো চারিদিক যেন ফাল্গুনের রূপের ঝলসানোময় উচ্ছ্বাসের জানান দিচ্ছে। ঋতু বৈচিত্র্যের মধুর মাস আগমন এই বসন্তে। সবুজ প্রকৃতির আমেজ অনেকটা এখন আবেগের। বসন্তের ফাল্গুন আর আমের মুকুল তাই যেন একই সূত্রে গাঁথা। বছরের এই নির্দিষ্ট সময় জুড়ে প্রায় চারিদিকে শ্রেণী পেশার মানুষেরও দৃষ্টিও থাকে চির সবুজ আম গাছের মগডালে। আম গাছের মুকুল ফোটার এ দৃশ্য ছেঁয়ে গেছে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও। উপজেলার সব এলাকাতেই এখন কম-বেশি রয়েছে আমের বাগান। দুরন্ত শৈশবে কাঁচা-পাকা আম পাড়ার আনন্দ অনেকেরই স্মৃতিতে চির অমর। তাছাড়া বর্তমানে আম বাংলাদেশের প্রধান চাষযোগ্য অর্থকরী ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এখানেই মনে পড়ে গেলো পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের মামার বাড়ি কবিতার কথা। আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা, ফুল তুলিতে যায়। ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যায়। মামার বাড়ি ঝড়ের দিনে আম কুড়াতে সুখ। এভাবেই বাংলার চিত্র তুলে ধরেছিলেন সেই পল্লীকবি। মামার বাড়ির কবিতাটি পংক্তিগুলো এখন বাস্তবেই ফূটে উঠেছ। উপজেলার কৃষি অফিস সুত্র জানায়, উপজেলা জুড়ে আমাদের আমের বাগান আছে। তারমধ্য দৌলৎপুর, ভায়না মালিপাড়া, হরিশপুর, ভবানীপুর, হামিরহাটী, ভূইয়াপাড়া, শুড়া, সোনাতনপুর, চটকাবাড়ীয়া, কালাপাহাড়িয়া, কুলবাড়িয়া, পারমথুরাপুর,সহ মোট ৩৫ বিঘা জমিতে আমের বাগান আছে।
উপজেলার চটকাবাড়ীয়া গ্রামের আম চাষী হরিণাকুণ্ডু'র সাবেক পৌর মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু জানান, এ বছরের আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকুলে আছে।টানা শীত ও কুয়াশার দাপট কাটিয়ে আমের মুকুলের অনুকুলে এসেছে। আশা করছি ভরা ফাল্গুনে এবার উপজেলা সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে আম গাছে ব্যপক আম ধরবে। তবে শীলা বৃষ্টি হলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলেও জানান তিনি।
আমের মুকুল, মনকাড়া ঘ্রাণের বিষয়ে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান এঁর সাথে একান্ত স্বাক্ষাৎকালে তিনি জানান, ছত্রাক জনিত রোগে আমের মুকুল ফুল গুটি আক্রান্ত হতে পারে। অনেক সময় মাঘমাসে একটু বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হবে না। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে আছে। মুকুল যখন হালকা গুটি গুটি হয় তখন হোপার পোকা লাগে। এ সময়ে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে রক্ষা পেতে রিপকর্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। আমের বাগান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তাছাড়া আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আমের বাম্পার ফলন হবে। তবে কুয়াশার এই সময়ে কোনও ঔষধ না দিয়ে পানি স্প্রে করতে পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।