১৫ Jun ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
সারাদেশ / অপরাধ

সম্পাদক-প্রকাশক সেজেছে আসামি, প্রতারক, ভুয়া উপসচিব, চাঁদাবাজ দুর্বৃত্তরা

২৬ মার্চ, ২০২৪

ছবি: ভূয়া পত্রিকার অনুলিপি

বহু মামলার আসামি, ভুয়া উপসচিব, চিহ্নিত প্রতারক, চাঁদাবাজ দুর্বৃত্তরা ভূয়া রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ব্যবহার করেই দেশে কয়েক ডজন দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করে চলছে।পাশাপাশি অনুমোদনহীন শত শত অনলাইনের ছড়াছড়ি চলছে দেশজুড়ে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা জুরে এসব নামে বেনামে বহু পত্রিকার ছড়াছড়ি  মনগড়া নিউজ আর গুজব নির্ভর এসব পত্রিকা ও অনলাইন সর্বত্রই বিভ্রান্তির নিয়ামক হয়ে উঠেছে।

সরকার বিরোধী নানা কল্প কাহিনী প্রচারণা চালিয়েও তারা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। রাজধানী সহ দেশের সর্বত্র ভূয়া সাংবাদিক তৈরির কারখানা গুলো নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।

অশিক্ষিত, গন্ডমূর্খ, সোর্স, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, বহু মামলার আসামি, ঘোষিত মাদক ব্যবসায়ি, ফুটপাতের হকার অলৌকিক ভাবে পত্রিকার ডিক্লিয়ারেশন, লিমিটেড কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে পত্রিকা প্রকাশ, গার্মেন্টস কর্মী ও মূর্খ দিয়ে পত্রিকার ডিজাইন করে হাতিয়ে রাতারাতি সম্পাদক বনে গেছেন। 

এরচেয়েও বেশি ঘটছে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন পত্রিকা আর অনলাইন পোর্টাল তৈরির ছড়াছড়ি। কথিত এ সম্পাদকদের অনেকে নিজের নাম সাক্ষর করতেও কলম ভাঙ্গার উপক্রম হয়। কেউ কেউ নাম সাক্ষরের রাবার স্ট্যাম্প বানিয়ে নিয়েছেন।

ডজন ডজন মামলার আসামি এমনকি হত্যা মামলার প্রধান আসামি, তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ি, চিহ্নিত প্রতারক, মলম পার্টির সদস্যরা,ভুয়া উপসচিব পরিচয় দিয়ে প্রতারণা এবং কোন্ কৌশলে কত টাকার বিনিময়ে পুলিশ গোয়েন্দাদের ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জুটিয়ে ডিক্লিয়ারেশন হাতিয়েছেন তা বলার সাধ্য নেই।

জাল জালিয়াতির সার্টিফিকেটসহ দলিলপত্রাদি জমা দিলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও কী এক আশ্চর্য জাদুর বলে সেসব কাগজে চোখ বুজে সই করে দিয়েছেন। বলিহারি সব আয়োজন! দায়িত্বহীন দুর্নীতিবাজদের লুটপাটের ঘৃণ্যচিত্র এসব। রেজিস্ট্রেশনবিহীন বা কৌশলী ডিক্লিয়ারেশন লাভ করেই কথিত সম্পাদক সাহেবরা দুটি কাজে তড়িৎকর্মা হয়ে উঠেন।

১) শহরের সুবিধাজনক স্থানে ঢাউস সাইজের একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন ২) সাংবাদিকতার আইডি কার্ড দেদারছে বিক্রির মহোৎসব।

এ শ্রেণীর সম্পাদক প্রকাশকরাই দেশজুড়ে চিহ্নিত অপরাধীদের মাঝে হাজার হাজার কার্ড বিক্রির মাধ্যমে সাংবাদিকবহুল দেশে পরিনত করেছেন। 

কার্ডধারী অনেকেই নিজেকে লাইসেন্সধারী চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচয় দিতেও দ্বিধা করে না। এসব কারণেই কার্ড বিক্রেতা সম্পাদকদের অনেকেই সাংবাদিক তৈরির কারখানা আখ্যা দিয়ে ইয়ার্কীও করে থাকে। বহু ত্যাগ, ঝুঁকি আর সততার অজস্র দৃষ্টান্ত সৃষ্টির গৌরবদীপ্ত পেশা সাংবাদিকতার এহেন অমর্যাদা ও কলঙ্ক লেপনের ঘটনা নিরবে মেনে নেয়া যায় না, যেতে পারে না।

কেসস্টাডি—১ : দশ বছরের জাল পত্রিকা, চট্টগ্রামের শীর্ষ এক প্রতারক টানা ১০ বছর ধরে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন নকল দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করে চলছে। পত্রিকাটিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নামও প্রচার করা হচ্ছে। জাল লাইসেন্সে প্রকাশিত ভূয়া এ পত্রিকার নাম দৈনিক আলোকিত দেশ। 

পত্রিকাটির অনলাইন ভার্সন আছে, ফেসবুক পেইজ রয়েছে এমনকি প্রকাশ করা হয় ই—পেপারও। নকল এ পত্রিকাকে পুঁজি করে একদিন, দু’দিন নয় গত দশটি বছর ধরেই তিনি ভয়ঙ্কর জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ সারাদেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

জেলায় জেলায় থানায় থানায় রিপোর্টার নিয়োগ দিয়ে চাঁদাবাজির বিস্তারও ঘটিয়েছেন বাধাহীনভাবে। বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে এই প্রতারক “দৈনিক আলোকিত দেশ” নামক পত্রিকাটির ডেটলাইনে রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ডিএ—৬০৫৮ হিসেবে মূদ্রণ করলেও তা পুরোপুরি জালিয়াতি কান্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

এরপরও জাল জালিয়াতির ভূয়া ডিএ নাম্বার ব্যবহার করেই পত্রিকাটি বছরের পর বছর যাবত প্রকাশ করে চললেও জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে তথ্য মন্ত্রনালয় পর্যন্ত কেউ তা ঘূর্ণাক্ষরও টের পাননি কেন তা নিয়ে রীতিমত প্রশ্ন উঠেছে।ভূয়া পত্রিকা জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকাশ করার ঘটনা অনুসন্ধানকালে নানাবিধ তথ্য উপাত্ত বেরিয়ে এসেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলোকিত দেশ নামে একটি দৈনিক পত্রিকার ডিক্লিয়ারেশন নেয়া আছে চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে। ২৩/০৯/২০১৪ তারিখ থেকে মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজন সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দৈনিক আলোকিত দেশ পত্রিকাটির ডিক্লিয়ারেশন প্রাপ্ত হন। কিন্তু তিনি নানাবিধ কারণে এ পত্রিকা প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে পারেননি।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক জানান, নিয়মিত প্রকাশ না হওয়ায় ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই এক পত্রের মাধ্যমে আলোকিত দেশ পত্রিকার ডিক্লিয়ারেশন বাতিল করা হয়।

চুয়াডাঙ্গার তৎকালীন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস স্বাক্ষরিত ওই আদেশে আদেশে বলা হয়, ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধন) অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এর ৭ ধারা অনুযায়ী দৈনিক আলোকিত দেশ পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশে ব্যর্থ হওয়ায় ডিক্লারেশন বাতিল করা হলো। 

অথচ প্রতারক জনৈক কে এম রুবেল কথিত দৈনিক আলোকিত দেশ পত্রিকাটি বছরের পর বছর ধরে চট্টগ্রাম থেকে বের করলেও রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার হিসেবে ঢাকার ডিএ নাম্বার ব্যবহার করে চলছেন। জয়েন স্টক কোম্পানি থেকে ব্যবসায়িকের রেজি নং – ৫১৬১১/২০২৩ নাম্বার নিয়ে দৈনিক প্রলয় নামের একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করছেন।

ঢাকা থেকে নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশ করছে। অনলাইন পোর্টালে দেখা যায়, জয়েন স্টক এক্সচেঞ্জের নাম্বার নিয়ে উক্ত প্রতারক সম্পাদক সেজেছেন। তার নাম মির্জা সোবেদ আলী রাজা ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোজিনা আক্তার কে বানিয়েছেন প্রকাশক।

২০২২ সালে উপসচিব পরিচয় দিয়ে প্রতারণাকালে ডিএমপির ডিবির হাতে আটক হন। মিরপুর মডেল থানা নিয়মিত মামলা হয়। উক্ত মামলা বিচারাধীন দিন।

ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দুটি পত্র পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা দপ্তরে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাকে আটক করতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ করে রাজধানী থেকে পালিয়েছেন। উক্ত প্রতারক রাজার বিরুদ্ধে তার প্রথম স্ত্রী কোহিনুর আক্তার যশোর বিজ্ঞ আদালতে ভরণপোষণ ও যৌতুক আইনে দুটি মামলা করেন ২০১৮ সালে ।

একটি মামলা তারপরে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। ভরণপোষণ মামলার রাজাকে তিন বছরে সাজা দেন আদালত। রাজার প্রথম স্ত্রী কোহিনুর জানান, আমার বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর আগে। বিয়ের পর দুটি বাচ্চা জন্মগ্রহণ করেন । একটি মেয়ে একটি ছেলে। মেয়ের বয়স বর্তমানে ১৮, ছেলে বয়স ১২, আমার পৈত্রিক সম্পত্তি প্রতারণামূলক বিক্রি করে পালিয়ে যায় আজ থেকে ১২ বছর আগে।

১২ বছর ধরেই তাকে খুঁজছি। কোন সন্ধান না পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমি শুনেছি ময়মনসিংহ দোবাউড়া উপজেলায় রোজিনা আক্তার নামে একটি মহিলা বিয়ে করেছে।

রোজিনা আক্তারকে নিয়ে ময়মনসিংহ শহরের আর কে মিশন রোড মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে। কোহিনুর জানান, আমি খুব শীঘ্রই মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট থানায় প্রেরন করতে আমার আইনজীবীকে বলেছি।

Related Article