০৪ মে, ২০২৩
ছবি: জনগণের তোপের মুখে
অবশে জনগণের তোপের মুখে অহিংস আন্দোলনের নেতারা।
সুইস ব্যাংক থেকে বিনা সুদে ঋণ এনে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া থানার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রায় পাঁচ হাজার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি কার্ড) তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। শহর থেকে এই চক্রটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে বিভিন্ন উপজেলার পাড়া-মহল্লায়।
গ্রামের মানুষেরজজসরলতাকে পুঁজি করে আইডি কার্ডের তথ্যের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে গ্রামের নারী ও তরুণীদের ব্যবহার করছে চক্রটি।
স্থানীয় লোকজন জানান, বেশ কয়েকটি এলাকায় থেকে তাদের সদস্যদের ফোন দিয়ে জড়ো করা হচ্ছে নারীদের। পরে সেখান থেকে শিক্ষিত ও কর্মক্ষম দেখে উপজেলাভিক্তিক নারী এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
ঐ চক্রটি এলাকার লোকজনকে আরও আকৃষ্ট করার জন্য রুহিয়া করিম জুট মিল মাঠে সংহতি সমাবেশের ব্যানারে এক সমাবেশের আয়োজন করে যেখানে হাজার হাজার সহজ সরল মানুষের সমাগম ঘটায়।
এ সময় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিনা সুদে ঋণ দান সহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বক্তব্য রাখেন।
প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, বাংলাদেশের যেসব কালোটাকা এবং পাচার, লুণ্ঠিত অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা পড়ে আছে সেগুলো কিছু দিনের মধ্যেই উদ্ধার করে গরিব-অসহায় ও কর্মমুখী মানুষের মধ্যে বিনা সুদে ঋণ দেয়া হবে।
এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষদের জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা করে দেয়া হবে। আর যারা মোটামুটি স্বাবলম্বী, সচ্ছল ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের ১ লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা দেয়া হবে। পরে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে কিস্তি দিলেই চলবে।
আইডি কার্ডের ফটোকপি সংগ্রহের সময় কার্ডপ্রতি ৫০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচশত টাকাও হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রুহিয়া থানা ঘনিমহেষপুর গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী সহ অসংখ্য ভুক্তভোগী বলেন, অহিংস গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনের স্থানীয় সংগঠক মোস্তফা আমাদেরকে বলেছেন, কিছুদিন পরে বিনা সুদে ১ লাখ টাকা দেবে।
এখন শুধু আইডি কার্ড আর জনপ্রতি ৫০ টাকা থেকে ৫০০ করে টাকা জমা দিলেই চলবে। শুনলাম, অনেকেই দিতেছে। পরে আমিও আমাদের বাড়ির তিনজনের আইডি কার্ড আর টাকা জমা দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় মোস্তফা বলছে, আগামী তিন মাসের মধ্যেই ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যদি না হয় তবে টাকা ফেরত দেবে।’
রুহিয়া থানার খড়ি বাড়ি এলাকার বাসিন্দা শহিদুল বলেন, ‘আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। বিভিন্ন এনজিওর ঋণ নিয়ে চলি। পরে পরিবারের সদস্যরা রোজগার করে কিস্তিতে সেই ঋণ পরিশোধ করে। কিন্তু কিছুদিন আগে পাশের বাড়ির একজন এসে বলল নতুন একটি সংগঠন বিনা সুদে ঋণ দেবে।
এখন শুধু আইডি কার্ড আর কাগজপত্র ফটোকপির জন্য ২০ টাকা করে জমা দিলেই চলবে। তখন আমিসহ বাড়ির পাঁচজনের আইডি কার্ড আর ১০০ টাকা জমা দিয়েছি।’
মিটিংয়ে কী আলোচনা হয়েছিল এমন প্রশ্নে জবাবে মোস্তফা বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের যে কালোটাকা জমা পড়েছে, তা দেশে এনে গরিব, অসহায় ও কর্মমুখী মানুষের মধ্যে বিতরণ করে অবৈধ টাকা বৈধ করা হবে।
মোস্তফা বলেন, ‘আমরা জনস্বার্থে কাজ করছি। এখানে আমাদের কোনো স্বার্থ নেই। ঢাকা অফিস থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এলাকা থেকে এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে ফরম পূরণ আকারে পাঠাতে। সুইস ব্যাংকের কালোটাকা দেশে এনে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেয়া হবে। তাই আমরা এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাচ্ছি।
সুইস ব্যাংকের টাকা দেশে আনবেন কীভাবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই দায়িত্ব আমাদের অফিস প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার সাহেবের। আমাদের সংগঠনের নাম অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ। এ নামে ইউটিউবে আমাদের একটা বড় চ্যানেলও আছে। আপনি চাইলে দেখতে পারেন।’
অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামক প্রতিষ্ঠানটির রুহিয়া থানার দায়িত্বে আছেন মোস্তফা।
কথিত অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা বিদেশে পাচার ও লুন্ঠনকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য কাজ করছি এবং সেই টাকা দেশের দরিদ্র মানুষের মধ্যে ঋণ বিতরণ করব।
সদস্য সংগ্রহ নামে অর্থ আত্মসাৎ বিষয় জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে এড়িয়ে যায় এবং বলেন আমাদের সংগঠনের কেউ কোন আর্থিক লেনদেনের সাথে জরিত থাকতে পারে না যদি কেউ জরিত থাকে তাহলে সেই দায় বর্তায় তার উপর।
রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু বলেন অহিংস গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনের একটা প্রোগ্রাম থেকে নাকি জনগণ তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে এমন খবর শুনে আমি তাদের সাথে কথা বলছি কিন্তু সংগঠনটির নেতারা কোন বৈধ কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি।পরবর্তীতে রুহিয়া থানা পুলিশ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন।
রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা বলেন, অহিংস গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনের স্থানীয় সংগঠক মোস্তফা অর্থ লেনদেনের কথা স্বীকার করে এবং গ্রাহকদের মাঝে তাদের দেওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিস্রুতি দিতে চাওয়া মর্মে নেতাকর্মীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান বলেন ইতোমধ্যেই বিষয়টি রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ কে জানানো হয়েছে। তিনি এ নিয়ে কাজ করছেন। শিগগিরই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা হবে