১৫ Jun ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
অপরাধ

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আড়ালে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা, ফেনীর শিশিরসহ গ্রেফতার-৬

২৩ নভেম্বর, ২০২২

কামরুল আরেফিন,
ফেনী জেলা (ফেনী) প্রতিনিধি

ছবি: মীর মো.কামরুল হাসান শিশিরসহ আটককৃত হুন্ডি ব্যবসায়ীরা।

মোবাইল এজেন্টের নামে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।  গ্রেফতারকৃতরা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) এজেন্ট ব্যবসার আড়ালে হুন্ডি ব্যবসা করতেন। এমএফএস ব্যবহার করে চার মাসে ৩ কোটি টাকা হুন্ডি করেছে। 
সোমবার (২১ নভেম্বর) রাতে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অভিযানে ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গ্রেফতারদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল, ১৮টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ ও একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে মালিবাগের সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া এ তথ্য জানান।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- ফেনী সদরের মৃত মো. আব্দুল মতিনের ছেলে ও ফ্রিডম নেট ওয়েবসাইট পরিচালনাকারী মীর মো. কামরুল হাসান শিশির (২৮), কুমিল্লার লাকসামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ও ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ ম্যানেজার খোরশেদ আলম (৩৪),  মো. মামুন মিয়ার ছেলে  ও বিকাশ এজেন্ট মো. ইব্রাহিম খলিল (৩৪), মৃত কাজী হাবিবুল্লাহর ছেলে ও বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসারদের (ডিএসও) কাজী শাহ নেওয়াজ (৪৬), একই জেলার কোতয়ালীর মো. গোলাম হোসেনের ছেলে ও বিকাশ এজেন্ট মো. আজিজুল হক  তালুকদার (৪২) ও একই এলাকার মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ও বিকাশ এজেন্ট মো. নিজাম উদ্দিন  (৩৫)।


মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর)  দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান বলেন, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা দিন দিন তাদের সিস্টেম আপডেট করছে। তারা এখন অ্যাপের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করছেন। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অধীনে যেসব ডিস্ট্রিবিউশন হাউস কাজ করছে, তাদের নজরদারির আওতায় রাখতে হবে। যদি তারা এসব ডিস্ট্রিবিউশন হাউসকে নজরদারিতে না রাখেন তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। ডিস্ট্রিবিউশন হাউসগুলোকে খুব সতর্কতার সঙ্গে নজরদারি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ফ্রিডম ফ্লেক্সি ২৪ ডট কম নামে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী হুন্ডি কারবারিগণ বাংলাদেশে যে নাম্বারগুলোতে টাকা পাঠানো হবে সেই নম্বরগুলো ইনপুট দিত এবং বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টদের সহায়তায় বাংলাদেশী হুন্ডির এজেন্টদের মাধ্যমে টাকাগুলো সরাসরি ডিস্ট্রিবিউশন হয়ে প্রাপকের কাছে যেত।
মোহাম্মদ আলী বলেন, গ্রেফতারকৃত চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার ও বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ আর্নারদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে অর্থ পাচার করতো। তারা ভিপিএন ব্যবহার করে এসব কাজ করত।
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, ২০০০ এজেন্ট সিমের বেশ কিছু এজেন্ট সদস্য হুন্ডির মতো অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত। ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ নির্ভুল এবং দ্রুততম উপায়ে সম্পন্ন করার জন্য তারা বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। প্রবাসীদের কষ্টের টাকা যেন এভাবে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার না হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার পেছনে হুন্ডি ব্যবসাকে দায়ী করে সিআইডি প্রধান বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য হারে প্রবাসী আয় কমে এসেছে। কমে এসেছে রিজার্ভ। দেখা দিয়েছে ডলারের তীব্র সংকট। এই অবস্থায় অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা বন্ধ করতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠপর্যায়ে তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে।
সিআইডি ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহপূর্বক এমএফএস এর মাধ্যমে হুন্ডি পরিলক্ষিত হচ্ছে এরকম প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক এমএফএস এজেন্ট একাউন্টের সন্ধান পায়। সিআইডির ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট ঢাকা। ইতোপূর্বে চট্টগ্রামে যৌথভাবে তিনটি অভিযান পরিচালনা করে সর্বমোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছিল।
এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগিতায় চক্রের সদস্যরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে বলে জানায় সিআইডি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হুন্ডির ব্যবসার মাধ্যমে ফেনী সদর উপজেলার মৃত মো.আব্দুল মতিনের ছেলে মীর মো. কামরুল হাসান শিশির অঢেল ধন-সম্পওির মালিক হয়েছেন। শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে করিম টাওয়ারে বিলাসবহুল, কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট ও ৩০/৩৫ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ির মালিক হয়েছেন।  স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া বাজারে অবস্হিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার মালিকসহ প্রচুর পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায়ী মীর মো. কামরুল হাসান শিশির।

Related Article