১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ছবি: ভূমিকম্পের জলন্ত
গত ৪ ফেব্রুয়ারী সোমবার তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে সেখানে নিহতের সংখ্যা দাড়িয়েছে সাড়ে ১৭ হাজারের উপরে আর আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এ ছাড়া ধ্বংসস্তূতের নিচে চাপা পড়ে আছে আরও হাজার হাজার মানুষ। চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। অনেকে এই ভূমিকম্পকে কিয়ামতের আলামত বলে উল্লেখ করছেন কিন্তু আসলেও সঠিক কিনা। আসলে সঠিকভাবে বলা কঠিন, হতে পারে এটা সেই ভয়াবহ আলামত। রাসুল সঃ বলেছেন কিয়ামতের আগে ভয়াবহ ভূমিকম্প হবে এমনকি বছর জুড়ে ভূমিকম্প হবে। কি কি কারণে ভূমিকম্প হবে সেটাও রাসুল সঃ বলে গিয়েছেন যখন মদ পান ও অশ্লীলতা বেড়ে যাবে, হত্যা ও জিনা বৃদ্ধি পাবে বাদ্য যন্ত্রের কদর বেশি হবে, জুলুম চরম আকারে বাড়তে থাকবে।
বিশ্বের তিনটি জায়গায় ভূমিকম্প হবে পশ্চিমে, পূর্বে ও জাজিরাতুল আরবে। যত দিন যাচ্ছে ততই ভূমিকম্পের সংখ্যা বাড়ছে। আর ততই সারা পৃথিবীর মানুষ অশ্লীলতা, মদ পান, জিনা, হত্যা, জুলুম করতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করছে আর ততই ভয়াবহ ম্যাসাকারের দিকে যাচ্ছে এই বিশ্ব। হয়তোবা এর চেয়ে আরও ভয়ংকর ভূমিকম্প দেখবে বিশ্ববাসী। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন কিয়ামতের আগে সকল নগরীই ধ্বংস হবে।
কিছু কিছু সময় মানুষ যে কত অসহায় হয়ে যায়, মাঝে মধ্যে এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটার পর বুঝা যায় বা আমাদের কিছু বিষয় স্মরণ করিয়ে দেয়। এসব ঘটনা এটাই প্রমাণ করে— আমাদের অর্থ-বিত্ত, ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি সবকিছু মূল্যহীন আর মাটিতে মিশে যাওয়া এক মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র; তবু আমাদের অহংকারের শেষ নেই, দাম্ভিকতার অন্ত নেই। দুনিয়ার মোহে সবসময় আমরা অন্ধ হয়ে আছি কোন কিছু তোয়াক্কা করিনা।
তবে আমরা একটু জেনে নিই ভূমিকম্প কিভাবে কখন হয় বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি। আমরা অনেকেই নাম শুনেছি টেকটোনিক প্লেট, আসলে এটা কি এবং এরা কিভাবে ভূমিকম্প ঘটায়।
প্লেট টেকটোনিক হচ্ছে একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এই তত্ত্বে পৃথিবীর অশ্বমণ্ডল—অর্থাৎ একে অপরের দিকে চলাচল করতে সক্ষম এমন অনমনীয় খণ্ডের সমন্বয়ে তৈরি ভূত্বক বা পৃথিবীর উপরিতলের বর্ণনা করা হয়েছে। সর্বপ্রথম ১৯১২ সালে জার্মান আবহাওয়াবিদ আলফ্রেড ওয়েগনার ‘কন্টিনেন্টাল ড্রিফট’ নামে একটি তত্ত্ব প্রদান করেন। তাঁর এই তত্ত্বে তিনি ব্যাখ্যা দেন যে ‘বহুকাল আগে সবগুলো মহাদেশ পরস্পর সংযুক্ত ছিল। একত্রে এদের প্যানজিয়া বা সুপারকন্টিনেন্ট বলা হতো। পরে কালের আবর্তে ভূত্বকীয় পাতের নড়াচড়ায় আলাদা আলাদা মহাদেশে বিভক্ত হয়ে যায়।’ পরবর্তী বিজ্ঞানীরা তাঁর এই তত্ত্বটির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গবেষণা ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আধুনিকতম তত্ত্ব বের করেন, যা সবার কাছে প্লেট টেকটোনিক হিসেবে পরিচিত।
এই তত্ত্বের মূল ধারণা হলো, ভূপৃষ্ঠের নিচে পৃথিবীর শিলামণ্ডল কতগুলো অংশে বা খণ্ডে বিভক্ত। এগুলোকে প্লেট বলে। এই প্লেটগুলো গুরুমণ্ডলের আংশিক তরল অংশের ওপরে ভাসমান অবস্থায় আছে। ভূত্বকীয় প্লেটগুলোকে মূলত সাত ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন—আফ্রিকান প্লেট, এন্টার্কটিক প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেট, উত্তর আমেরিকান প্লেট, প্যাসিফিক প্লেট, দক্ষিণ আমেরিকান প্লেট। এই প্লেটগুলো প্রতিবছর কয়েক সেন্টিমিটার কোনো এক দিকে সরে যায়। কখনো একে অন্যের দিকে আসে, কখনো আবার কয়েক মিলিমিটার ওপরে ওঠে বা নিচে নামে। যখন একটি প্লেটের সঙ্গে আরেকটি প্লেট ঘষা বা ধাক্কা খায় তখন ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির উদগিরণের ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হয়, প্লেটগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে ঘষা বা ধাক্কা খেলে সেখানে প্রচুর তাপ সৃষ্টি হয়। তাপে ভূ-অভ্যন্তরের পদার্থ গলে যায়। এ গলিত পদার্থ চাপের ফলে নিচ থেকে ভূ-পৃষ্ঠ ভেদ করে বেরিয়ে আসে। একেই আগ্নেয়গিরির উদগিরণ বলে। বেরিয়ে আসা গলিত তরল পদার্থ ম্যাগমা নামে পরিচিত। একইভাবে প্লেটগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে ধাক্কা খেলে পৃথিবী কেঁপে ওঠে। একেই ভূমিকম্প বলে। এ ছাড়া বিজ্ঞানীরা এ তত্ত্ব ব্যবহার করে পর্বত সৃষ্টি এবং মহাসাগর ও মহাদেশ সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন -কালের কন্ঠ অনলাইন)
বৈজ্ঞানিক এই তত্ত্ব অনুযায়ী তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, জর্দান এই ৪টি দেশ আলাটুনিয়া টেকটোনিক প্লেটের প্রায় উপরে অথবা কাছাকাছি অবস্থিত একারণে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে তুরস্কের অবস্থান খুবই ঝুকিপূর্ণ জায়গায় বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ও সম্পদ বিনষ্ট হয় ২০১০ সালে হাইতিতে। নেপালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৯ হাজার জনের মৃত্যু ও বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয় ২০১৫ সালে। ঐ বছরে নেপালের ভূমিকম্পের আতঙ্কে বাংলাদেশে ৬ জনের মৃত্যু হয়। হাইতিতে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭।
বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো তুরস্কের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের বাংলাদেশও তাদের মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ আমাদের নিহত মুসলিম ভাইবোনদের শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন, তাদের পরিবারকে ধৈর্যধারন করার শক্তি দিন।
প্রিয়নবী (স.)-এর ভাষ্যানুযায়ী কিয়ামতের আগে অত্যধিক ভূমিকম্প হবে। কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে বড় বড় ভূমিকম্প হওয়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। (সহিহ বুখারি-৯৮৯) কাজেই আমাদের উচিত, ভূমিকম্প বা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখলে আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া, আল্লাহর আজাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং আখিরাতের সম্বল আহরণের চেষ্টা বাড়িয়ে দেওয়া। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আগে সকল নগরী ধ্বংস হবে।
( তথ্য সুত্র - কুরআন, হাদিস, গুগল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল)
লেখক - কলামিস্ট ও সাংবাদিক।
ধন্যবাদ 🌸💚
Good news