৩১ Jul, ২০২৫
ছবি: আদর্শ ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতাল
বগুড়ার ধুনটে আদর্শ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে সিজারিয়ান এক রোগীর পেটে সার্জিক্যাল গজ রেখে সেলাইয়ের ঘটনার এক বছরের মাথায় ফের ভুল চিকিৎসায় আকলিমা খাতুন (২০) নামের আরেক সিজারিয়ান রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে রোগীর পরিবারকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বলে জানা গেছে।
মৃত আকলিমা খাতুন উপজেলার গোসাইবাড়ি গ্রামের মাস্টারপাড়া এলাকার আলম হোসেনের মেয়ে এবং একই গ্রামের শামীম হোসেনের স্ত্রী।
এর আগেও ওই হাসপাতালে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই মহনা খাতুন (২৪) নামের এক প্রসূতির সিজারের সময় তার পেটের ভেতর সার্জিক্যাল গজ রেখে সেলাই করা হয়। সেই ঘটনাটিও টাকা দিয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়।
২০২৫ সালের ৬ এপ্রিল এক রোগী দম্পতি — আব্দুর রাকিব সনেট ও তার স্ত্রী — চিকিৎসা নিতে গিয়ে হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল মোমিনের হাতে শিশু সন্তানসহ মারধরের শিকার হন। ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাননি। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু ও নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ সত্ত্বেও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ উদাসীন থাকায় সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকায় কর্মরত আকলিমা খাতুন সন্তান প্রসবের জন্য কিছুদিন আগে বাবার বাড়ি গোসাইবাড়িতে আসেন। গত মঙ্গলবার সকালে প্রসবব্যথা শুরু হলে পরিবারের লোকজন তাকে ধুনট আদর্শ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাত ২টার দিকে তাকে অ্যানেসথেসিয়া দেন ডা. মেহেরুল মিশু। এরপর থেকেই আকলিমার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এ অবস্থায় ডা. সাখাওয়াত হোসেন সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা নবজাতকের জন্ম দেন। নবজাতকটি সুস্থ থাকলেও আকলিমার অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়। পরে বুধবার দুপুরে তাকে বগুড়া টিএমএস হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
আকলিমার স্বজনরা জানান, সিজারের পর থেকেই আকলিমার অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। বিষয়টি বারবার জানানো হলেও ডাক্তার ও নার্সরা গুরুত্ব দেননি। একপর্যায়ে তাকে বগুড়ায় নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে যায়। নবজাতকটি সুস্থ থাকলেও জন্মের পর মায়ের দুধ পায়নি।
স্বজনরা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিষয়টি আপস-মীমাংসা করে নেয়। ফলে তাদের আর কোনো অভিযোগ নেই।
এ বিষয়ে গোসাইবাড়ি ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তইবর রহমান মণ্ডল বলেন, আকলিমার বাবার বাড়ি আমার ওয়ার্ডেই। তার মৃত্যুর বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরিবার আপস-মীমাংসা করেছে বলে শুনেছি।
অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া চিকিৎসক ডা. মেহেরুল মিশু বলেন, সিজারের পর পোস্ট-অপারেটিভ অব্যবস্থাপনার কারণেই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল মোমিন বলেন, সিজারের পর আকলিমা স্ট্রোক করেন এবং সেখান থেকেই তার মৃত্যু ঘটে। তিনি আরও জানান, পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় মানবিক বিবেচনায় অর্থ সহায়তা দিয়ে বিষয়টি আপস-মীমাংসা করা হয়েছে।
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ কাদির বলেন, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।