১১ এপ্রিল, ২০২৩
মোঃ শরিফুল ইসলাম (শরীফ), 
ছবি: ভোলাহাটে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবাসসুম হাজারও কৃষকের আবাদকৃত ধান নিশ্চিন্তে ঘরে নিতে পাশে দাঁড়ালেন তিনি। সরজমিন ঘুরে ঘুরে দেখার দৃশ্য, পাশে পিআইও মোঃ কাউসারুল আলম সরকার
মাঠ ভরা হাজার হাজার বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদন হলেও ঘরে তুলতে হিমসিম খেতে হতো হাজারো কৃষককে। সারা বছর ধরে ফসল আর ফসল। ধান, গম, শরীষা সব ধরণের ফসল উৎপাদন হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঘরে তুলা নিয়ে বিপাকে পড়তে হতো কৃষদের।
দীর্ঘদিন ধরে অসহায় হাজারো কৃষকের দাবী ছিল ভোলাহাট উপজেলার গোহালবাড়ী ইউনিয়নের বিলভাতিয়ায় এলজিইডি পাকা রাস্তা থেকে সুরানপুর নতুন বিজিবি ক্যাম্প হয়ে বুড়িডোবা পর্যন্ত ১কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করে তাঁদের কষ্টে উৎপাদিত ফসল হাসি মুখে ঘরে তুলার জন্য। কিন্তু কে শুনে কার কথা। দিনের পর দিন রাতের পর রাত গড়িয়ে গেলেও অসহায় কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর মানুষের ছিল বড্ড অভাব।
কৃষকের দাবীর মুখে সরজমিন ছুটে যান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবসসুম, সাথে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ কাউসার আলম সরকার। স্থানীয় কৃষক তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরে রাস্তাটি নির্মাণের জোর দাবী জানান। কৃষকের দাবীর প্র্ক্ষেীতে আলোচনা সাপেক্ষে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে গ্রামীণ রাস্তাসমূহ টেকসই করণের লক্ষ্যে হেয়ারিং বোন বন্ড(এইচবিবি) সোলিং(ইটের রাস্তা) প্রকল্পটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের অর্থায়ণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বাস্তবায়ণে রাস্তাটি নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। এতে প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমির ফসল ঘরে তুলতে পারার আশায় হাজারো কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
সরজমিন জমিন গিয়ে উপজেলার বিলভাতিয়া বিলের ২৬ নং গভীর নলকূপের ঘরে কথা হয় পাঁচটিকরি গ্রামের কৃষক মোঃ হাবিবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, এ গভীর নলকূপে আমি সোয়া ২বিঘা জমি চাষাবাদ করি। এখানে প্রায় ১হাজার মিটার রাস্তা কাঁচা থাকায় মানুষ বৃষ্টি বাদলের সময় যাতায়াত করতে পারতো না।
কৃষকেরা মাঠে কাজে আসলে সাইকেল ডিপের নিকট রেখে যেতো জমির কাজে। এখন রাস্তাটি নির্মাণ হওয়ায় ফসল নিজের নিজের ঘরে উঠাতে কোন অসুবিধা হবে না। রাস্তাটিতে এখন কাজের চাপ কম থাকায় মানুষ কম চলাচল করলে কাজের সময় ৩/৪ হাজার মানুষ চলাচল করে। রাস্তাটি হওয়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য হাত তুলে দোয়া করেন হাবিবুর রহমান।
গভীর নলকূপ মালিক তিলোকী গ্রামের মোঃ বাশির বলেন, বিলভাতিয়ার বুড়িডোবা এলাকায় ২০১২ সালে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করে ১’শ ৬০ বিঘা বা কখনো তার চেয়ে বেশী জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ফসলে পানি সেচ দিয়ে আসছি। বৃষ্টি হলে কাদাতে এ রাস্তায় চলাচল করা যেতো না। রাস্তাটি হিয়ারিং হওয়াতে হাজার হাজার কৃষকের কষ্ট কমলো।
তিনি আরো বলেন, গত বছর বৃষ্টি হওয়ায় অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে ধান মাথায় করে ২৬ নং ডিপের কাছে নিয়ে যেতে হয়েছে। এতে খুব কষ্ট হতো এবং খরচ বেশী হয়েছে। এখন থেকে এ সব বিপদ থেকে রক্ষা পাবে হাজার হাজার কৃষকগণ।
শ্রমিক মোঃ সাদিক, মোঃ রাব্বুল ও মোঃ আলিফ বলেন, আগে সাইকেল নিয়ে কাজে আসলে বৃষ্টি হলে বাড়ী ফেরা মুশকিল হতো, কিন্তু এখন সে ভয় আর নেই। এখন খুবই ভালো লাগছে।
দর্শনার্থী মোঃ জহির বলেন, ভোলাহাট উপজেলায় কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় আমরা বিলভাতিয়ায় মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে যাই। আগে মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়েছি বৃষ্টি হলে কাঁদাতে বাড়ী ফেরা এখন মনে হলে স্বপ্নের মত মনে হয়। এখন সোজা ধান ক্ষেতের মধ্যদিয়ে রাস্তা নিমার্ণ হয়েছে। এই রাস্তা চলে গেছে বহুদুর পর্যন্ত।
বর্ষা মৌসুমে এ যেনো ছোট কোয়াকাটা হিসেবে সবাইকে মুগ্ধ করবে। এদিকে ভারত সীমান্ত নিকটে হওয়ায় বিজিবি ক্যাম্প নির্মাণ হচ্ছে। রাস্তাটি বিজিবি সদস্যদের সীমান্ত সড়ক হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলেও তিনি জানান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ কাউসার আলম সরকার জানান, রাস্তাটি নির্মাণে কৃষকের খুব উপকার হয়েছে। তারা এখন স্বাচ্ছন্দে অনায়াসে প্রতিটি মৌসূমে তাদের প্রতিটি আবাদ নির্বিগ্নে করবে বলে আমি আশাবাদী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কৃষকের দাবী ছিল বিলভাতিয়া রাস্তাটি নির্মাণের। বর্ষার সময় কৃষকদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে সমস্যায় পড়তে হতো। অনেক কৃষকের ফসল নষ্ট হতো। কৃষকদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে রাস্তাটি করে দেয়া হয়েছে। রাস্তাটি নির্মাণ করাতে কৃষকেরা তাদের ফসল হাসিমুখে ঘরে তুলতে পারবে।
